বন্ধুকে মনে রাখার কিছু ১ – আবুল হাসান
একদিন ঝরা পাতার মতো নামহীন নিঃশব্দে
তোমাদের কাছ থেকে ঝরে যাবো যখোন
পিছনে ফেলে রেখে আমার নিদ্রাহীনতার কয়েক গুচ্ছ ফুল।
সম্ভব হবে না আর তোমাদের সাথে
রেস্তোরাঁর স্বগত সন্ধান।
সন্ধ্যেবেলা ইসলামপুর থেকে একতোড়া ফুল কিনে নিয়ে
গ্রীন রোড়ের নিষ্ফলতায় ফেলে আসা।
তোমরা তখন ভেবো একদিন কথাচ্ছলে
কোনো আমি এক জোড়া চোখের অবিনশ্বর সান্নিধ্যে
কী এক অমোঘ আলোয়
তার ব্লাউজের গন্ধময় চিত্র গেঁথে গেঁথে
আঁকতে চেয়েছি রক্তময় লাল নাশপাতি!
বন্ধুকে মনে রাখার কিছু ২ – আবুল হাসান
দল বেঁধে সিনেমায় ঢুকে
মনে পড়ে যায় যদি আমাকে সবার কোনোদিন
দীর্ঘায়িত পর্দার অলৌকিক স্পর্শে সেদিন
পরিপূর্ণ শিহরনময় একটি দুঃখের দৃশ্যে
আমাকে খুঁজবে তুমি?
ঘরে ফিরে যাবার বেলায় মনে হবে?
নাকি, সে-রাতের কথা আকস্মাৎ দগ্ধ কোরে দেবে?
যে রাত্রে অর্থহীন পাগলের মতো
কী সে এক দুর্মর আকাঙ্খায়
শহরের শব্দহীন রাস্তায় সারারাত ঘুরে
শৈশবের পুরনো ইতিহাস
ইন্দ্রধনুর মতো পরেছি যখন চোখে মুখে!
এবং সমস্ত নারীর প্রেম-পাপে
ঘুমহীন নিয়নের মতো এই দেহ
টাঙ্গিয়ে দিয়েছি শেষ রাত্রির বিনিদ্র বাতাসে।
এক মূ্র্ছিত ঠোঁটে
পরম দুঃখে গেয়ে গেছিঃ
সহজ উপায় নেই কোনো স্বপ্নহীনতার?
বন্ধুকে মনে রাখার কিছু ৩ – আবুল হাসান
নরক-শয্যায় বৃথা আমাদের শূণ্য হুতাশন,
আজ মনে হয়ঃ নিরন্তর শোকের হাতের
আঙ্গুল আমরা সব!
কিছু-নেই-দুঃখের ভেতর ধ্বংসময় ক্ষণিক পাগল!
যেখানে প্রশান্তি নেই মানুষের লোকক্ষত গাঁথা,
সেখানে মৃত্যু, শুধু মৃতের ঘুমের অন্ধকার;
গ্রীনরোডের পুষ্পিত শাড়ীর মতো
মনে হয়না পৃথিবীকে তাই আর,
ইসলামপুরের পুষ্পস্তবকের মতো
পৃথিবীর নারীর হৃদয়!
তাই বলি তোমাদের একমাত্র মৃত্যুই সুন্দর
চাঁদের মতোন আত্মা আমার মেলে দিতে পারি
আজ অনন্ত মৃত্যু সম্ভাষণে।
তোমার চিবুক ছোঁবো, কালিমা ছোঁবো না – আবুল হাসান
এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
তোমার ওখানে যাবো, তোমার ভিতরে এক অসম্পূর্ণ যাতনা আছেন,
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই শুদ্ধ হ’ শুদ্ধ হবো
কালিমা রাখবো না!
এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
তোমার ওখানে যাবো; তোমার পায়ের নীচে পাহাড় আছেন
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই স্নান কর
পাথর সরিয়ে আমি ঝর্ণার প্রথম জলে স্নান করবো
কালিমা রাখবো না!
এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
এখন তোমার কাছে যাবো
তোমার ভিতরে এক সাবলীল শুশ্রূষা আছেন
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই ক্ষত মোছ আকাশে তাকা–
আমি ক্ষত মুছে ফেলবো আকাশে তাকাবো
আমি আঁধার রাখবো না!
এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
যে সকল মৌমাছি, নেবুফুল গাভীর দুধের সাদা
হেলেঞ্চা শাকের ক্ষেত
যে রাখাল আমি আজ কোথাও দেখি না– তোমার চিবুকে
তারা নিশ্চয়ই আছেন!
তোমার চিবুকে সেই গাভীর দুধের শাদা, সুবর্ণ রাখাল
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই কাছে আয় তৃণভূমি
কাছে আয় পুরনো রাখাল!
আমি কাছে যাবো আমি তোমার চিবুক ছোঁবো, কালিমা ছোঁবো না!
চামেলী হাতে নিম্নমানের মানুষ – আবুল হাসান
আসলে আমার বাবা ছিলেন নিম্নমানের মানুষ
নইলে সরকারী লোক,পুলিশ বিভাগে চাকরি কোরেও
পুলিশী মেজাজ কেন ছিলনা ওনার বলুন চলায় ও বলায়?
চেয়ার থেকে ঘরোয়া ধূলো,হারিকেনের চিমনীগুলো মুছে ফেরার মতোন তিনি
আস্তেকেন চাকরবাকর এই আমাদের প্রভু নফর সম্পর্কটা সরিয়ে দিতেন?
থানার যত পেশাধারী ,পুলিশ সেপাই অধীনস্থ কনেস্টবল
সবার তিনিএকবয়সী এমনভাবে তাস দাবাতেন সারা বিকেল।
মায়ের সঙ্গে ব্যবহারটা ছিল যেমন ব্যর্থপ্রেমিক
কৃপা ভিক্ষা নিতে এসেছে নারীর কাছে।
আসলে আমার বাবা ছিলেন নিম্নমানের মানুষ
নইলে দেশে তাঁর ভাইয়েরা জমিজমার হিশেব কষছে লাভঅলাভের
ব্যক্তিগত স্বার্থ সবার আদায় কোরে নিচ্ছে সবাই
বাবা তখন উপার্জিত সবুজ ছিপের সুতো পেঁচিয়ে মাকে বোলছেন,এই দ্যাখোতো
জলের রং এর সাথে এবার এই সুতোটা খাপ খাবেনা?
আমি যখন মায়ের মুখে লজ্জা ব্রীড়া,ঘুমের ক্রীড়া
ইত্যাদিতে মিশেছিলুম,বাবা তখন কাব্যি কোরতে কম করেননি মাকে নিয়ে
শুনেছি শাদা চামেলী নাকি চাপা এনে পরিয়ে দিতেন রাত্রিবেলা মায়ের খোপায়।
মা বোলতেন বাবাকে তুমি এই সমস্তলোক দ্যাখোনা?
ঘুষ খাচ্ছে,জমি কিনছে,শনৈঃ শনৈঃ উপরে উঠছে,
কত রকম ফন্দি আটছে কত রকম সুখে থাকছে,
তুমি এসব লোক দ্যাখোনা?
বাবা তখন হাতের বোনা চাদর গায়ে বেরিয়ে কোথায়
কবি গানের আসরে যেতেন মাঝরাত্তিরে
লোকের ভীড়ে সামান্য লোক,শিশিরগুলি চোখে মাখাতেন।
এখন তিনি পরাজিত,কেউ দ্যাখেনা একলা মানুষ
চিলেকোঠার মতোন তিনি আকাশ দ্যাখেন,বাতাস দ্যাখেন
জীর্ণ শীর্ণব্যর্থচিবুক বিষন্নলাল রক্তে ভাবুক রোদন আসে,
হঠাৎ বাবা কিসের ত্রাসে দুচোখ ভাসান তিনিই জানেন।
একটি ছেলে ঘুরে বেড়ায় কবির মতো কুখ্যাত সব পাড়ায় পাড়ায়
আর ছেলেরা সবাই যে যার স্বার্থ নিয়ে সরে দাঁড়ায়
বাবা একলা শিরদাঁড়ায় দাঁড়িয়ে থাকেন,কী যে ভাবেন,
প্রায়ই তিনি রাত্রি জাগেন,বসে থাকেন চেয়ার নিয়ে
চামেলী হাতে ব্যর্থ মানুষ,নিম্নমানের মানুষ।
বশীকরণ মন্ত্র – আবুল হাসান
যা বৃষ্টি তুই যা, আরে দুর্ভিক্ষকে খা,
আরে মেয়ের ঊরু বুকের শুরু, বিড়াল ধ’রে খা।
নিতম্বে যে নতুন রাষ্ট্র রাজদ্রোহীর হা
ওদের কাছে নগ্ন হয়ে আর তো পারি না,
যা বৃষ্টি তুই যা।
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি – আবুল হাসান
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
ক্ষমা করবেন বৃক্ষ, আপনার শাখায় আমি সত্য পাখি বসাতে পারবো না !
বানান ভীষণ ভুল হবে আর প্রুফ সংশোধন করা যেহেতু শিখিনি
ভাষায় গলদঃ আমি কি সাহসে লিখবো তবে সত্য পাখি, সচ্চরিত্র ফুল ?
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
সচ্চরিত্র ফুল আমি যত বাগানের মোড়ে লিখতে যাই, দেখি
আমার কলম খুলে পড়ে যায় বিষ পিঁপড়ে, বিষের পুতুল !
বদলে যাও, কিছুটা বদলাও – আবুল হাসান
কিছুটা বদলাতে হবে বাঁশী
কিছুটা বদলাতে হবে সুর
সাতটি ছিদ্রের সূর্য; সময়ের গাঢ় অন্তঃপুর
কিছুটা বদলাতে হবে
মাটির কনুই , ভাঁজ
রক্তমাখা দুঃখের সমাজ কিছুটা বদলাতে হবে…
বদলে দাও, তুমি বদলাও
নইলে এক্ষুনি
ঢুকে পড়বে পাঁচজন বদমাশ খুনী ,
যখোন যেখানে পাবে
মেরে রেখে যাবে,
তোমার সংসার, বাঁশী, আঘাটার নাও ।
বদলে যাও, বদলে যাও, কিছুটা বদলাও !
উচ্চারণগুলি শোকের – আবুল হাসান
লক্ষি বউটিকে
আমি আজ আর কোথাও দেখিনা,
হাটি হাটি শিশুটিকে
কোথাও দেখিনা,
কতগুলি রাজহাঁস দেখি
নরম শরীর ভরা রাজহাঁস দেখি,
কতগুলি মুখস্থ মানুষ দেখি, বউটিকে কোথাও দেখিনা
শিশুটিকে কোথাও দেখিনা !
তবে কি বউটি রাজহাঁস ?
তবে কি শিশুটি আজ
সবুজ মাঠের সূর্য, সবুজ আকাশ ?
অনেক রক্ত যুদ্ধ গেলো,
অনেক রক্ত গেলো,
শিমুল তুলোর মতো
সোনারূপো ছড়ালো বাতাস ।
ছোটো ভাইটিকে আমি
কোথাও দেখিনা,
নরোম নোলক পরা বোনটিকে
আজ আর কোথাও দেখিনা !
কেবল পতাকা দেখি,
কেল উৎসব দেখি ,
স্বাধীনতা দেখি,
তবে কি আমার ভাই আজ
ঐ স্বাধীন পাতাকা ?
তবে কি আমার বোন, তিমিরের বেদীতে উৎসব ?
একদিন ঝরা পাতার মতো নামহীন নিঃশব্দে
তোমাদের কাছ থেকে ঝরে যাবো যখোন
পিছনে ফেলে রেখে আমার নিদ্রাহীনতার কয়েক গুচ্ছ ফুল।
সম্ভব হবে না আর তোমাদের সাথে
রেস্তোরাঁর স্বগত সন্ধান।
সন্ধ্যেবেলা ইসলামপুর থেকে একতোড়া ফুল কিনে নিয়ে
গ্রীন রোড়ের নিষ্ফলতায় ফেলে আসা।
তোমরা তখন ভেবো একদিন কথাচ্ছলে
কোনো আমি এক জোড়া চোখের অবিনশ্বর সান্নিধ্যে
কী এক অমোঘ আলোয়
তার ব্লাউজের গন্ধময় চিত্র গেঁথে গেঁথে
আঁকতে চেয়েছি রক্তময় লাল নাশপাতি!
বন্ধুকে মনে রাখার কিছু ২ – আবুল হাসান
দল বেঁধে সিনেমায় ঢুকে
মনে পড়ে যায় যদি আমাকে সবার কোনোদিন
দীর্ঘায়িত পর্দার অলৌকিক স্পর্শে সেদিন
পরিপূর্ণ শিহরনময় একটি দুঃখের দৃশ্যে
আমাকে খুঁজবে তুমি?
ঘরে ফিরে যাবার বেলায় মনে হবে?
নাকি, সে-রাতের কথা আকস্মাৎ দগ্ধ কোরে দেবে?
যে রাত্রে অর্থহীন পাগলের মতো
কী সে এক দুর্মর আকাঙ্খায়
শহরের শব্দহীন রাস্তায় সারারাত ঘুরে
শৈশবের পুরনো ইতিহাস
ইন্দ্রধনুর মতো পরেছি যখন চোখে মুখে!
এবং সমস্ত নারীর প্রেম-পাপে
ঘুমহীন নিয়নের মতো এই দেহ
টাঙ্গিয়ে দিয়েছি শেষ রাত্রির বিনিদ্র বাতাসে।
এক মূ্র্ছিত ঠোঁটে
পরম দুঃখে গেয়ে গেছিঃ
সহজ উপায় নেই কোনো স্বপ্নহীনতার?
বন্ধুকে মনে রাখার কিছু ৩ – আবুল হাসান
নরক-শয্যায় বৃথা আমাদের শূণ্য হুতাশন,
আজ মনে হয়ঃ নিরন্তর শোকের হাতের
আঙ্গুল আমরা সব!
কিছু-নেই-দুঃখের ভেতর ধ্বংসময় ক্ষণিক পাগল!
যেখানে প্রশান্তি নেই মানুষের লোকক্ষত গাঁথা,
সেখানে মৃত্যু, শুধু মৃতের ঘুমের অন্ধকার;
গ্রীনরোডের পুষ্পিত শাড়ীর মতো
মনে হয়না পৃথিবীকে তাই আর,
ইসলামপুরের পুষ্পস্তবকের মতো
পৃথিবীর নারীর হৃদয়!
তাই বলি তোমাদের একমাত্র মৃত্যুই সুন্দর
চাঁদের মতোন আত্মা আমার মেলে দিতে পারি
আজ অনন্ত মৃত্যু সম্ভাষণে।
তোমার চিবুক ছোঁবো, কালিমা ছোঁবো না – আবুল হাসান
এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
তোমার ওখানে যাবো, তোমার ভিতরে এক অসম্পূর্ণ যাতনা আছেন,
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই শুদ্ধ হ’ শুদ্ধ হবো
কালিমা রাখবো না!
এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
তোমার ওখানে যাবো; তোমার পায়ের নীচে পাহাড় আছেন
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই স্নান কর
পাথর সরিয়ে আমি ঝর্ণার প্রথম জলে স্নান করবো
কালিমা রাখবো না!
এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
এখন তোমার কাছে যাবো
তোমার ভিতরে এক সাবলীল শুশ্রূষা আছেন
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই ক্ষত মোছ আকাশে তাকা–
আমি ক্ষত মুছে ফেলবো আকাশে তাকাবো
আমি আঁধার রাখবো না!
এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
যে সকল মৌমাছি, নেবুফুল গাভীর দুধের সাদা
হেলেঞ্চা শাকের ক্ষেত
যে রাখাল আমি আজ কোথাও দেখি না– তোমার চিবুকে
তারা নিশ্চয়ই আছেন!
তোমার চিবুকে সেই গাভীর দুধের শাদা, সুবর্ণ রাখাল
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই কাছে আয় তৃণভূমি
কাছে আয় পুরনো রাখাল!
আমি কাছে যাবো আমি তোমার চিবুক ছোঁবো, কালিমা ছোঁবো না!
চামেলী হাতে নিম্নমানের মানুষ – আবুল হাসান
আসলে আমার বাবা ছিলেন নিম্নমানের মানুষ
নইলে সরকারী লোক,পুলিশ বিভাগে চাকরি কোরেও
পুলিশী মেজাজ কেন ছিলনা ওনার বলুন চলায় ও বলায়?
চেয়ার থেকে ঘরোয়া ধূলো,হারিকেনের চিমনীগুলো মুছে ফেরার মতোন তিনি
আস্তেকেন চাকরবাকর এই আমাদের প্রভু নফর সম্পর্কটা সরিয়ে দিতেন?
থানার যত পেশাধারী ,পুলিশ সেপাই অধীনস্থ কনেস্টবল
সবার তিনিএকবয়সী এমনভাবে তাস দাবাতেন সারা বিকেল।
মায়ের সঙ্গে ব্যবহারটা ছিল যেমন ব্যর্থপ্রেমিক
কৃপা ভিক্ষা নিতে এসেছে নারীর কাছে।
আসলে আমার বাবা ছিলেন নিম্নমানের মানুষ
নইলে দেশে তাঁর ভাইয়েরা জমিজমার হিশেব কষছে লাভঅলাভের
ব্যক্তিগত স্বার্থ সবার আদায় কোরে নিচ্ছে সবাই
বাবা তখন উপার্জিত সবুজ ছিপের সুতো পেঁচিয়ে মাকে বোলছেন,এই দ্যাখোতো
জলের রং এর সাথে এবার এই সুতোটা খাপ খাবেনা?
আমি যখন মায়ের মুখে লজ্জা ব্রীড়া,ঘুমের ক্রীড়া
ইত্যাদিতে মিশেছিলুম,বাবা তখন কাব্যি কোরতে কম করেননি মাকে নিয়ে
শুনেছি শাদা চামেলী নাকি চাপা এনে পরিয়ে দিতেন রাত্রিবেলা মায়ের খোপায়।
মা বোলতেন বাবাকে তুমি এই সমস্তলোক দ্যাখোনা?
ঘুষ খাচ্ছে,জমি কিনছে,শনৈঃ শনৈঃ উপরে উঠছে,
কত রকম ফন্দি আটছে কত রকম সুখে থাকছে,
তুমি এসব লোক দ্যাখোনা?
বাবা তখন হাতের বোনা চাদর গায়ে বেরিয়ে কোথায়
কবি গানের আসরে যেতেন মাঝরাত্তিরে
লোকের ভীড়ে সামান্য লোক,শিশিরগুলি চোখে মাখাতেন।
এখন তিনি পরাজিত,কেউ দ্যাখেনা একলা মানুষ
চিলেকোঠার মতোন তিনি আকাশ দ্যাখেন,বাতাস দ্যাখেন
জীর্ণ শীর্ণব্যর্থচিবুক বিষন্নলাল রক্তে ভাবুক রোদন আসে,
হঠাৎ বাবা কিসের ত্রাসে দুচোখ ভাসান তিনিই জানেন।
একটি ছেলে ঘুরে বেড়ায় কবির মতো কুখ্যাত সব পাড়ায় পাড়ায়
আর ছেলেরা সবাই যে যার স্বার্থ নিয়ে সরে দাঁড়ায়
বাবা একলা শিরদাঁড়ায় দাঁড়িয়ে থাকেন,কী যে ভাবেন,
প্রায়ই তিনি রাত্রি জাগেন,বসে থাকেন চেয়ার নিয়ে
চামেলী হাতে ব্যর্থ মানুষ,নিম্নমানের মানুষ।
বশীকরণ মন্ত্র – আবুল হাসান
যা বৃষ্টি তুই যা, আরে দুর্ভিক্ষকে খা,
আরে মেয়ের ঊরু বুকের শুরু, বিড়াল ধ’রে খা।
নিতম্বে যে নতুন রাষ্ট্র রাজদ্রোহীর হা
ওদের কাছে নগ্ন হয়ে আর তো পারি না,
যা বৃষ্টি তুই যা।
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি – আবুল হাসান
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
ক্ষমা করবেন বৃক্ষ, আপনার শাখায় আমি সত্য পাখি বসাতে পারবো না !
বানান ভীষণ ভুল হবে আর প্রুফ সংশোধন করা যেহেতু শিখিনি
ভাষায় গলদঃ আমি কি সাহসে লিখবো তবে সত্য পাখি, সচ্চরিত্র ফুল ?
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
সচ্চরিত্র ফুল আমি যত বাগানের মোড়ে লিখতে যাই, দেখি
আমার কলম খুলে পড়ে যায় বিষ পিঁপড়ে, বিষের পুতুল !
বদলে যাও, কিছুটা বদলাও – আবুল হাসান
কিছুটা বদলাতে হবে বাঁশী
কিছুটা বদলাতে হবে সুর
সাতটি ছিদ্রের সূর্য; সময়ের গাঢ় অন্তঃপুর
কিছুটা বদলাতে হবে
মাটির কনুই , ভাঁজ
রক্তমাখা দুঃখের সমাজ কিছুটা বদলাতে হবে…
বদলে দাও, তুমি বদলাও
নইলে এক্ষুনি
ঢুকে পড়বে পাঁচজন বদমাশ খুনী ,
যখোন যেখানে পাবে
মেরে রেখে যাবে,
তোমার সংসার, বাঁশী, আঘাটার নাও ।
বদলে যাও, বদলে যাও, কিছুটা বদলাও !
উচ্চারণগুলি শোকের – আবুল হাসান
লক্ষি বউটিকে
আমি আজ আর কোথাও দেখিনা,
হাটি হাটি শিশুটিকে
কোথাও দেখিনা,
কতগুলি রাজহাঁস দেখি
নরম শরীর ভরা রাজহাঁস দেখি,
কতগুলি মুখস্থ মানুষ দেখি, বউটিকে কোথাও দেখিনা
শিশুটিকে কোথাও দেখিনা !
তবে কি বউটি রাজহাঁস ?
তবে কি শিশুটি আজ
সবুজ মাঠের সূর্য, সবুজ আকাশ ?
অনেক রক্ত যুদ্ধ গেলো,
অনেক রক্ত গেলো,
শিমুল তুলোর মতো
সোনারূপো ছড়ালো বাতাস ।
ছোটো ভাইটিকে আমি
কোথাও দেখিনা,
নরোম নোলক পরা বোনটিকে
আজ আর কোথাও দেখিনা !
কেবল পতাকা দেখি,
কেল উৎসব দেখি ,
স্বাধীনতা দেখি,
তবে কি আমার ভাই আজ
ঐ স্বাধীন পাতাকা ?
তবে কি আমার বোন, তিমিরের বেদীতে উৎসব ?
0 comments:
Post a Comment